লিনাক্স এর ইতিহাস

১৯৬০ এর দশকেও একেকটি কম্পিউটার একটি দুইতলা বাড়ি অথবা একটি বিজ্ঞান ল্যাব এর সমান ছিল এবং সেই কম্পিউটার পরিচালনার জন্য একাধিক মানুষকে নিয়োজিত থাকতে হত এবং এতে অনেক Power এর প্রয়োজন হত যা ছিল বেশ ব্যায়বহুল। কিন্তু এর চেয়েও বড় মাথাব্যাথার কারন ছিল এর Operating system, কেননা এগুলির প্রতিটির জন্য আলাদা আলাদা Operating System ছিল। এই Operating System এর প্রগ্রামগুলিও ছিল পূর্বপরিকল্পনামাফিক, মানে এইগুলি এক বা একাধিক বিশেষ কাজের জন্য তৈরি করা হত অর্থাৎ পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা ছাড়া কোন কাজ করা যেত না।

অনেক বড় আকার এবং রক্ষনাবেক্ষন বেশ ব্যায়বহুল হওয়ার কারনে একটি কম্পিউটার কেনা এবং চালনো সে সময়ে কঠিন হয়ে পড়েছিল। তারও উপর ছিল দুর্বধ্য প্রোগ্রাম ভাষা এবং ভিন্ন ভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম। প্রতিটি কম্পিউটার এর জন্য মানুষকে আলাদা আলাদা প্রশিক্ষন দিতে হত এবং একটি কম্পিউটারকে পুনরায় ব্যবহার অনেকটাই অসম্ভব ছিল। তখন মানুষ চিন্তা কয়েকটি বিষয়কে নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করল যেগুলি উপরোক্ত সমস্যাগুলির মধ্যে সর্বাধিক সমাধান দিতে পারবে এবং কম্পিউটারকে মানুষের জন্য সর্বোচ্চ ব্যবহারপযোগী করে তুলে সাহায্য করবে। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা একটি সহজ সাধারন সার্বিকভাবে ব্যবহার্য সিস্টেমের জন্য কাজ শুরু করলেন। তখন পর্যন্ত প্রতিটি কম্পিউটার এর জন্য বিশেষভাবে লিখা কোড ব্যবহার করা হত তাই বিশেষজ্ঞরা চাচ্ছিলেন একটা একক ভাষা যা সবগুলি কম্পিউটারে ব্যবহৃত হবে এবং একটা ষ্ট্যান্ডার্ড মেনে চলবে। ফলে তারা এ্যাসেমব্লি ল্যাংগুয়েজের পরিবর্তে C প্রোগ্রামীং ল্যাংগুয়েজের ব্যবহার শুরু করলেন।

60এর দশের শেষের দিলে বেল ল্যাবরেটির কিছু গবেষক ঐ C প্রোগ্রামীং ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করে একটি অপারেটিং সিস্টেম এর উদ্ভাবন করলেন যা উপরোক্ত অধিকাংশ সমস্যাগুলির সমাধানে সক্ষম। ডেবলপার টিম এর নামকরণ করলেন “UNIX”। এবং এর পরবর্তী সময়ে এই উদ্ভাবন একটা বিরাট সাফল্যের দরজা খুলে দিল। প্রচুর প্রতিষ্ঠান এই অপারেটিং সিস্টেম এর সাথে ব্যবহারের জন্য সহযোগী সফ্টওয়ার তৈরি করা শুরু করল এবং অনেকগুলি বিশেষজ্ঞদল এই অপারেটিং সিস্টেমকে সমর্থন করার জন্য এগিয়ে এল। দিন দিন এই অপারেটিং সিস্টেম এর সমস্যা কমতে লাগল এবং সুবিধা বাড়তে লাগল। ৮০ দশকের শুরু দিকে ঐ সমস্ত বড় বড় কম্পিউটার এর আকার ছোট হতে শুরু করল এবং মানুষের মধ্যে এর ব্যাবহার ব্যাপকহারে বাড়তে শুরু করল।

৮০এর দশকের শেষ দিকে এবং ৯০ এর দশকের শুরুর দিকে University of Helsinki এর কম্পিউটার বিভাগের একজন ছাত্র Linus Torvalds এই ফ্রি Unix নিয়ে চিন্তা করা শুরুলেন এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি একটি নতুন অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করে ফেললেন এবং তার নাম রাখলেন “Linux”। নামটি আসলে তার নিজের নাম এবং Unix এর সংমিশ্রনে রাখা হয়েছিল। তিনি এটিকে Open Lisense এর অন্তভূক্ত রেখেছিলেন যাতে সবাই এটি ব্যবহার করতে পারে এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন এবং পরিবর্ধন করতে পারে যেগুলি অন্যান্য ব্যবহাকারীদেরও উপকারে আসবে। এর পরবর্তী সময় আসলে শুধুই এই নতুন অপারেটিং সিস্টেম এর উত্থানের ইতিহাস। সময়ের সাথে সাথে এই সিস্টেম এ নিরাপত্তা বিষয়গুলি যোগ করা হল, অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম এর সন্নিবেশ ঘটানো এবং সর্বপরি ব্যবহারকারীদের জন্য সর্বোচ্চ সুবিধা দিয়ে এর যাত্রা ক্রমাগত বাড়তেই থাকল। মূলত সাভার সাইডে ব্যবহারের জন্য এর গ্রহনযোগ্যতা দিন বাড়তেই থাকল তবে পাশাপাশি চলতে থাকল এটিতে সাধারন ডেস্কটপে ব্যভহারের জন্য প্রচেষ্টা। যদিও এখনও এটি পুরোপরি উইন্ডোজ বা ম্যাক এর মত একটা ছড়িয়ে যেতে পারনি কিন্তু তাদের চেয়ে কোন অংশে কম বলা যাবে না। সার্ভার সাইডে ব্যভহারের জন্য রেডহ্যাট, ফেডোরা, সেন্টওএস বা ডেবিয়ান যেরকম চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায় তেমনি ডেস্কপট এর জন্য সুসি, উবুন্টু বা মিন্ট কেও কিন্তু ব্যবহারকারী বেশ সাদরেই গ্রহন করেছে।

বর্তমানে বিশ্বে Linux এর প্রচুর ডিস্ট্রিবিউশন আছে, আপনাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বা পছন্দ অনুযায়ী যে কেনটি ব্যাবহার শুরু করতে পারেন। শুধু মনে রাখবেন সামনে যাই থাকুক না কেন পেছনে কিন্তু সবই লিনাক্স।